সৌজন্যই সংস্কৃতির পরিচয়
মূলভাব : সৌজন্যবোধ একটি জাতির সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে অর্থাৎ ব্যবহারের মাধ্যমে কারো সত্যিকারের পরিচয় পাওয়া যায়।
সম্প্রসারিত ভাব : সৌজন্য হচ্ছে মানুষের আচার ব্যবহার যা অন্যের সংস্পর্শে আসলে ফুটে উঠে। শিক্ষার নির্যাসকে সৌজন্য হিসেবে অভিহিত করা যায়। একজন মানুষ শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন তার সাথে কথা বলা হয়, তখন তার ব্যবহার ও আচরণ দেখে বলে দেয়া সম্ভব তার পরিচয়। পুঁথিগত শিক্ষাই শুধু সৌজন্য শিক্ষা দেয় না, মূলত তা শেখার জন্য পরিবার ও জাতির সংস্কৃতি ও প্রজ্ঞা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। বস্তুত পরিবার হচ্ছে সমাজ তথা জাতির একক। তাই পরিবারে যখন কোন বিষয়ের চর্চা হয় তা ক্রমে ক্রমে জাতীয় পর্যায়ে স্থান করে নেয়। পরিবার হচ্ছে সকল শিক্ষার সূতিকাগার। পরিবারের সদস্যের সাথে চলাফেরা করলে তাদের আচার-ব্যবহার থেকে ঐ পরিবার সম্পর্কে যেমন ধারণা পাওয়া যায়, তেমনিভাবে যখন কোন জাতির কোন সদস্যদের সাথে আমরা কথা বলি, এক সাথে চলাফেরা করি, তার সৌজন্য, তার শিষ্টাচার আমাদের বলে দেবে তার সংস্কৃতি, জাতি হিসেবে তারা সভ্য না অসভ্য, শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত। পথ ভুলে যাওয়া একজন পথিক, মরুভূমিতে তৃষ্ণায় ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারাল জ্ঞান ফেরার পর সে দেখলো দীর্ঘকায় আলখাল্লা পরিহিত একজন মানুষ তাকে পানি পান করাচ্ছে। লোকটি কথা না বললেও বুঝতে পারলো সে অবশ্যই একজন আফগান কেননা, অতিথিয়েতায় তারা বিশ্ব বিখ্যাত।
এমনি করে সৌজন্যতা গুচিয়ে দেয় ভাষার ব্যবধান, পরিচয়ে সমুন্নত করে কোন জাতিকে। আবার সৌজন্য ও শিষ্টাচার বর্জিত জাতিকে ঘৃণিত করে। কাজেই বলা যায় সৌজন্যই সংস্কৃতির পরিচয়।
ভাষা শুধু অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম নয়, ভাষা আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব ও অনুভূতির সাথে মিশে আছে। আমরা ভাষার মাধ্যমে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা এবং বিদ্বেষ প্রকাশ করি। একটি জাতির চিন্তা-চেতনা, যোগ্যতা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা জাতির পর জাতি পরিচালিত ও চর্চা হয়। সে অর্থে ভাষা ও জাতি অভিন্ন। 1952 সালে, শুধুমাত্র আমাদের ভাষাকেই প্রত্যাখ্যান করা হয়নি, আমাদের বহুদিনের ঐতিহ্য এবং অন্তর্নিহিত পরিচয়কেও অস্বীকার করা হয়েছিল। কোন জাতি তা সহ্য করতে পারে না। বাংলাদেশিরাও তা সহ্য করেননি। ২১ ফেব্রুয়ারি রক্ত ঝরিয়ে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি।